• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০২৩

আখাউড়া প্রতিনিধি :

এক সময় কৃষকরা শুধু ধান চাষের উপর নির্ভর ছিল। প্রযুক্তির সুবিধা না থাকায় এ চাষে তাদের লোকসান গুনতে হয়। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌসুম বেধে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতাসহ নানা প্রকার নানা প্রকার সবজি চাষ করছে। সবজি চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগে যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার ফসল পেতো। বর্তমানে তারা নানা প্রকার সবজি চাষে বিঘা প্রতি ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার উপর আয় করছে । কীটনাশক মুক্ত ওইসব শাক সবজি উৎপাদন করে নিজ পারিবারের  পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতি ভাবে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার আজমপুর, চানপুর, আনোয়ারপুর, হীরাপুর, আদমপুর, বনগজ, কৃষ্ণনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সবজি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।  এসব এলাকার বেশী ভাগ কৃষক মৌসুম বেধে  বার মাসই নানা প্রকারের সবজি আবাদ করছেন। কেউ নিজেদের পতিত জমিতে, কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় আবার কেউ বর্গা নিয়ে  কেউ বা করছেন বাড়ির ছাদে। বেশী ভাগ লোকজনই কৃষি অফিসের পরামর্শে এ চাষ করছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কম খরচে অধিক সবজি চাষে ধানের চাইতে কয়েকগুন বেশী লাভবান হওয়ায় দিন দিন আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষক মো.মোস্তাকিম সরকার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে দেশিয় পদ্ধতিতে শসা,টমেটো,মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। এ মৌসুমে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের টমেটো চাষ করেন।  জমি প্রস্তুত,,চারা রোপন, জমি ইজারা, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ বাদে প্রতি ১ বিঘায় তার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকার উপর।  সব মিলিয়ে টমেটোর আবাদ করতে এ পযর্ন্ত তার খরচ হয় ১৭ লাখ টাকা।  বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো ৮০-৮৫ টাকা দরে দৈনিক ৮-১০ মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে। এই পযর্ন্ত তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকার উপর টমেটো বিক্রি করেছেন বলে জানায়।  আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ৫০ লাখ টাকার উপর টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও যাবতীয় খরচ বাদে ১০ -১২লাখ টাকা আয় হবে।  তাছাড়া মৌসুম অনুযায়ী বারমাস নানা প্রকার সবজি আবাদ করে আসছেন।

কৃষক মো: বাবরু মিয়া বলেন  এক সময় তিনি ধান আবাদ করতেন। ধান চাষে  লোকসান হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সবজি আবাদ করছেন। এ মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে টমেটো, লাউ, লাল শাখ, বেগুন আবাদ করেন। জমি তৈরী চারা সংগ্রহ ও বপন করতে তার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।  ইতিমধ্যে টমেটো, লাউ, লাল শাক, বেগুন বিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ চাষে খরচ বাদে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার উপর আয় হবে। এতে তিনি খুবই খুশি।

কৃষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বাড়ি সংলগ্ন ২ বিঘা জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তিনি লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, ঢেড়শ, শসা, বেগুন, বরবটি চাষ করেন। স্থানীয় বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে। সবজি চাষে খরচ কম আর লাভ বেশী হওয়ায় বছর জুড়ে এ চাষ করছেন।  এই ২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করে বছরে  তার ১লাখ টাকার উপর আয় হচ্ছে বলে জানায়।

কৃষক মো. বাবুল মিয়া বলেন, তার কোন জায়গা জমি নেই। অনেক বছর ধরে বর্গা জমিতে ধান  চাষ করতেন। এতে প্রায় সময় জমিতে ফলন ভালো না হওয়ায় তার লোকসান হতো। কোন উপায় না পেয়ে  জমি বার্ষিক ইজারা নিয়ে লাউ, টমেটো, পুইশাক, বেগুন,শসাসহ নানা প্রকারের সবজি চাষ করেন। গত মৌসুমে সবজি চাষ করে তিনি দেড় লাখ টাকা আয় করেন। ফলন ও বাজার দর ভালো পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: তানিয়া তাবাসসুম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বার মাসই নানা প্রকার সবজি আবাদ করছে স্থানীয় কৃষকরা। বর্তমান সরকার কৃষকদেরকে সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে  আসছে। কৃষি অফিসের তৎপরতায় কৃষকরা সবজি চাষে তারা ভালো সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। বেকার ও শিক্ষিত সবজি চাষে এগিয়ে এলে একদিকে বেকারত্ব দূর হবে, অপরদিকে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও তরান্বিত হবে। তিনি সবজি চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads